বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ শহর…
বাগেরহাটের উপকণ্ঠে, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত, এই প্রাচীন শহরটি, পূর্বে খলিফাতাবাদ নামে পরিচিত, 15 শতকে তুর্কি সেনাপতি উলুগ খান জাহান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শহরের অবকাঠামো যথেষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রকাশ করে এবং একটি ব্যতিক্রমী সংখ্যক মসজিদ এবং প্রাথমিক ইসলামিক স্মৃতিস্তম্ভ, অনেকগুলি ইটের তৈরি, সেখানে দেখা যায়।
সংক্ষিপ্ত সংশ্লেষণ:
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ শহরটি বর্তমান বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত
মধ্যযুগীয় শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত। প্রাচীন শহর, পূর্বে খলিফাতাবাদ নামে পরিচিত, পুরানো ভৈরব নদীর দক্ষিণ তীরে বিস্তৃত ছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব 15 শতকে বিকাশ লাভ করেছিল। 50 কিমি 2 পর্যন্ত বিস্তৃত এই মহিমান্বিত শহরটিতে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের বিকাশের প্রাথমিক সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু ভবন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে 360টি মসজিদ, পাবলিক বিল্ডিং, সমাধি, সেতু, রাস্তা, জলের ট্যাঙ্ক এবং সেঁকা ইট দিয়ে নির্মিত অন্যান্য পাবলিক ভবন। ইসলামিক ধর্মীয় সৌধের ঘনত্ব খান জাহানের ধার্মিকতার দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা তার সমাধিতে খোদাইকৃত শিলালিপি দ্বারা প্রমাণিত। দুর্গের অভাব সুন্দরবনের দুর্ভেদ্য ম্যানগ্রোভ জলাভূমিতে পশ্চাদপসরণ করার সম্ভাবনার জন্য দায়ী। অবকাঠামোগুলির গুণমান - জল সরবরাহ এবং সরানো, জলাধার এবং জলাধার, রাস্তা এবং সেতু - সমস্ত পরিকল্পনার কৌশলগুলির একটি নিখুঁত আয়ত্ত এবং স্থানিক সংস্থার প্রতি একটি ইচ্ছা প্রকাশ করে৷ গাছপালা থেকে আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন স্মৃতিস্তম্ভগুলিকে 6.5 কিলোমিটার দূরে দুটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত করা যেতে পারে: পশ্চিমে, শাইত-গুম্বাদের মসজিদের চারপাশে এবং পূর্বে, খান জাহানের সমাধির চারপাশে। 50 টিরও বেশি স্মৃতিস্তম্ভ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে: প্রথম গ্রুপে, সিংগার, বিবি বেগনি এবং ক্লুমাক্কোলার মসজিদ; এবং দ্বিতীয়টিতে, রেজা খোদা, জিন্দাভির এবং রণবিজয়পুরের মসজিদ। মানদণ্ড (iv): বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ শহর সুন্দরবনের উত্তর পেরিফেরাল ভূমিতে একটি মধ্যযুগীয় মুসলিম শহরের নিদর্শন উপস্থাপন করে। এটি বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যের বিকাশের প্রাথমিক সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু ভবন রয়েছে।
"Sixty Dome Mosque"
বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি এবং ঐতিহ্যগত অর্থোডক্স মসজিদ পরিকল্পনার স্বাদ প্রতিনিধিত্ব করে এবং সমগ্র বাংলায় এটি তার ধরণের একমাত্র উদাহরণ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ, খান জাহানের সমাধি, এই ধরনের স্থাপত্যের পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফিক কথাবার্তার একটি অসাধারণ উপস্থাপনা। সাইটটি একটি অনন্য স্থাপত্য শৈলী প্রদর্শন করে, যা খান-ই-জাহান (15 শতক খ্রিস্টাব্দ) নামে পরিচিত, যা স্থাপত্যের ইতিহাসে একমাত্র পরিচিত উদাহরণ।
অখণ্ডতা:
মধ্যযুগীয় রূপ এবং নকশা সহ এই ঘনত্বে অবস্থিত ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ স্মৃতিস্তম্ভগুলির আসল মনোরম অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষত রয়েছে। বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ সিটির সম্পত্তিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে যার মধ্যে কেবল মসজিদ নয়, বাসস্থান, রাস্তা, প্রাচীন পুকুর, সমাধি, চিল্লাখানা (প্রাচীন কবরস্থান) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব, শহরের বৈশিষ্ট্যগুলি এখনও সংরক্ষিত। সম্প্রদায়ের অননুমোদিত কার্যকলাপের হুমকি এবং মাটি এবং বায়ুমণ্ডলের চরম লবণাক্ততা, যা সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্যগুলির শারীরিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, সাইট পরিচালকদের দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শৈতগম্বুজ মসজিদ সংরক্ষণে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
অখণ্ডতা:
মধ্যযুগীয় রূপ এবং নকশা সহ এই ঘনত্বে অবস্থিত ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ স্মৃতিস্তম্ভগুলির আসল মনোরম অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষত রয়েছে। বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ সিটির সম্পত্তিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে যার মধ্যে কেবল মসজিদ নয়, বাসস্থান, রাস্তা, প্রাচীন পুকুর, সমাধি, চিল্লাখানা (প্রাচীন কবরস্থান) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব, শহরের বৈশিষ্ট্যগুলি এখনও সংরক্ষিত। সম্প্রদায়ের অননুমোদিত কার্যকলাপের হুমকি এবং মাটি এবং বায়ুমণ্ডলের চরম লবণাক্ততা, যা সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্যগুলির শারীরিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, সাইট পরিচালকদের দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শৈতগম্বুজ মসজিদ সংরক্ষণে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সত্যতা:
স্মৃতিস্তম্ভগুলির সত্যতা রক্ষা করার জন্য, সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার ক্রিয়াগুলি মূল উপকরণ (চুন এবং মর্টার) ব্যবহারকে সম্মান করেছে। তা সত্ত্বেও, কিছু মূল বৈশিষ্ট্য যেমন মসজিদের ভিতরের পাথরের স্তম্ভ, জালিকাযুক্ত জানালা, পেডিমেন্ট, কার্নিসের উপরের ব্যান্ড, আগের হস্তক্ষেপে হারিয়ে গেছে। অনেক কাঠামো ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবহারে অব্যাহত রয়েছে যা ঐতিহ্যগত অনুশীলনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে ধরে রাখার মাধ্যমে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে অবদান রাখে।
সুরক্ষা এবং পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা:
সম্পত্তি প্রাচীনত্ব আইন, 1968 (সংশোধনী 1976) এর অধীনে পরিচালিত হয়। এছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পুরাকীর্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন (1947), স্থাবর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিধি (1976), সংরক্ষণ ম্যানুয়াল (1923) এবং প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ কোড (1938) এর অধীনে সম্পত্তি রক্ষা করে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিশ্চিত করে যে অনুপযুক্ত কার্যকলাপ যা সম্পত্তির অসামান্য সর্বজনীন মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে যেমন বিল্ডিং বা অবকাঠামো সম্পত্তির ভিতরে বা কাছাকাছি নির্মাণ করা যাবে না এবং কেউ সম্পত্তির মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ পরিবর্তন বা বিকৃত করতে পারবে না। বাংলাদেশ সরকার বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ নগরীর সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের জন্য ইউনেস্কো 1973/74-1977/78 প্রণীত মহাপরিকল্পনায় নির্ধারিত সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করেছে। লবণাক্ততা থেকে উদ্ভূত সংরক্ষণ সমস্যা সমাধানের জন্য আর্থিক প্রচেষ্টা করা হলেও, এটি ব্যাপকভাবে সমাধান করা হয়নি এবং অবনতি অব্যাহত রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সংরক্ষণসহ পিঅর্জিত ফলাফল মূল্যায়ন এবং উদীয়মান অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় নতুন কর্ম পরিকল্পনা প্রদান করার জন্য রোভিশনগুলি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। ঐতিহাসিক ল্যান্ডস্কেপ, বাফার জোন এবং সম্পত্তি সংরক্ষণের বিষয়ে এখনও সুরাহা করা হয়নি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং "দক্ষিণ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট" (বাংলাদেশ অংশ) নামে একটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তি তৈরি করবে, যা শীঘ্রই বাস্তবায়িত হতে চলেছে৷ সম্পত্তির সংরক্ষণের সাথে এই উদ্বেগগুলিকে টেকসইভাবে পরিচালনা করার চ্যালেঞ্জগুলি, এর অসামান্য সর্বজনীন মূল্যের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া দরকার। ঐতিহাসিক মসজিদের শহর নাম বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। ১৫ শতকের দিকে উলঘ খান-ই-জাহান ঐতিহাসিক মসজিদের শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রত্নস্থানটি ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হয় । এ এলাকায় বেশ কিছু মসজিদ, স্থাপনা, সমাধি, পুকুর ও ঢিবি পাওয়া রয়েছে । ষাটগম্বুজ মসজিদ এদের মধ্যে অন্যতম ।
ষাটগম্বুজ মসজিদ:
ষাটগম্বুজ মসজিদটিতে ৮১ টি গম্বুজ রয়েছে । মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। মসজিদ এলাকায় একটি জাদুঘর রয়েছে জনশ্রুতি আছে যে, হযরত খানজাহান (রঃ) ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথর সুদুর চট্রগ্রাম, মতান্তরে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠন বৈচিত্রে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বিশাল মসজিদের চতুর্দিকে প্রাচীর ৮ফুট চওড়া, এর চার কোনে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির এবং এ মিনারে উপরে উঠার সিড়ি আছে। মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরী, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগ পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এ ঐতিহাসিক মসজিদ এবং খানজাহান (রঃ) এর মাজার শরীফের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে । ইউনেস্কো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।
সিংগাইর মসজিদ:
ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি অবসিহত। এটি একগম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। মসজিদের (বাইরের দিকের ১১.৮৮ মিঃ x ১১.৮৮মিঃ) পলেস্তরাবিহীন দেয়ালগুলো গড়ে ২.১০মিঃ পুরু। প্রত্যেক কোনে বাইরের দিকে গোলাকারে বর্ধিত একটি করে সংলগন বুরম্নজ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালে খিলান দরজার সংখ্যা ৩টি। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রতিটিতে খিলান দরজার সংখ্যা ১টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের খিলানটির আকার অন্যগুলোর চেয়ে বড়। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে দুপাশে দুটি কুলঙ্গীসহ একটি অবতল মিহরাব আছে। অনুরূপ কুলঙ্গী উত্তর ও দক্ষিণের দরজাগুলোর দুপাশেও আছে। অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ষাটগম্বুজ মসজিদের অনুরূপ। কেবলমাত্র চার কোনের চারটি সংলগন গোলাকার বুরুজ মসজিদের কার্ণিস পর্যন্ত উঠানো।
নয়গম্বুজ মসজিদ:
ঠাকুর দিঘী বা খাঞ্জেলী দিঘীরপশ্চিম পাড়ে ১৬.৪৫ মিঃX১৬.১৫মিঃ ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত নয়গম্বুজ মসজিদটি অবসিহত। এর দেয়ালগুলো ২.৫৯মিঃ পুরম্ন। মসজিদ অভ্যন্তরে দু’সারি পাথরের থাম দিয়ে মোট নয়টি চৌকো খন্ডে বিভক্ত । প্রতিটি খন্ডের উপর মসজিদের ছাদের নয় গম্বুজ নির্মিত। পশ্চিমের কিবলা দেয়ালে নির্দিষ্ট দুরতব পর পর একটি করে মোট তিনটি অবতল মিহরাব আছে। এগুলোর টিম্প্যানাম ও স্প্যানাড্রল অংশে পোড়ামাটির কারম্নকাজ লক্ষ করা যায়।
সাবেকডাঙ্গা পূরাকীর্তি:
ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ৬কিঃমিঃ উত্তরে এই পূরাকীর্তিটি অবসিহত। দক্ষিণমূখী এই পূরাকীর্তিটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত (৭.৮৮ মিঃX৫.১০মিঃ)। এটি একটি প্রার্থনা কক্ষ। এর ইটের দেয়াল ১.৪৭ মিঃ পুরু। পুরাকীর্তির কার্ণিশ ধনুকের ন্যায় বক্র এবং ভিতরের দেয়াল পোড়ামাটির ফুল-লতা-পাতার অপূর্ব কারুকাজে ভরপুর। স্থাপত্য কৌশলে মনে হয় এটি খানজাহান সময়ের পরবর্তীকালে নির্মিত।
জিন্দাপীর মসজিদ:
জিন্দাপীর মাজার কমপেস্নক্সের উত্তর-পশ্চিম কোনে মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি অবসিহত। মসজিদটি বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় (৬মিঃX৬মিঃ) নির্মিত এটি একগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের চারপাশের চারটি গোলাকার বুরুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো গড়ে ১.৫২মিঃ পুরু। পূর্ব বাহুতে ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ বাহুতে একটি করে খিলান দরজা আছে। সামনের বাহুতে আছে তিনটি মিহরাব। ছাদের অর্ধগোলাকার গম্বুজটি ভাঙ্গা অবস্থায় ছিল। ২০০২ সালে এটিকে প্রত্নতাত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে পূর্ণ অবয়ব প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধ-খোলার সময়সূচীঃ
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে বাগেরহাট জাদুঘর খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে বাগেরহাট জাদুঘর খোলা থাকে।
টিকেট প্রাপ্তিস্থানঃ
বাগেরহাট জাদুঘরের গেটের ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার। জনপ্রতি টিকেট-এর দাম ২০/- টাকা করে। তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়ে না। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য ২০০/- টাকা করে।
কি ভাবে যাবেনঃ
বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাসে ষাটগুম্বজ বাসস্টপেজ লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে বাগেরহাট জাদুঘর ও ষাটগম্বুজ মসজিদটি অবস্থিত। ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে নিকটবর্তী বিভিন্ন দূরত্বে বাগেরহাট ঐতিহাসিক মসজিদের শহরের অন্য সব মসজিদ নিদর্শনগুলো রয়েছে। ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। মসজিদটির কোন শিলালিপি না থাকায় ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়না। তবে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে খান-ই-জাহান ১৫০০ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এ মসজিদে ব্যবহৃত পাথরগুলো রাজমহল থেকে আনা হয়েছিলো। ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউনেস্কো ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
বিবরণ:
মসজিদটি বাইরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট লম্বা।
আর ভিতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪৩ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮ ফুট লম্বা। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে ১১ টি বিরাট খিলানযুক্ত দরজা। অন্য দরজাগুলো থেকে মাঝখানের দরজাটি সবচেয়ে বড়। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে দরজা আছে ৭টি করে ১৪ টি। মসজিদের চারকোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের চূঁড়ায় রয়েছে একটি করে গোলাকার গম্বুজ। ছাদের কার্নিশের চেয়ে মিনারগুলোর উচ্চতা একটু বেশি। মসজিদের সামনের দিকের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা এবং অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা। মিনারের ভেতরে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি, আগে এই মিনার থেকে আযান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। মসজিদের অভ্যন্তরে মোট ষাটটি স্তম্ভ বা পিলার আছে। স্তম্ভগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ৬ সারিতে মোট ১০টি করে বিন্যস্ত আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথরের তৈরী তবে ৫ টি স্তম্ভ ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। স্তম্ভগুলোর চারপাশের ছাদের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। ষাট গম্বুজ মসজিদে ১১ টি সারিতে সর্বমোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। আর মিনারের উপর চারটি গম্বুজ সহ মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১ টি। মসজিদের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে সাতটি গম্বুজ ছাড়া বাকি ৭৪ টি গম্বুজই অর্ধগোলাকার। মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাব আছে ১০ টি। মাঝখানের মিহরাবটি বড় ও কারুকার্যপূর্ণ। দক্ষিণ দিকে ৫ টি এবং উত্তর দিকে ৪টি মিহরাব রয়েছে। উত্তর পাশে ১ টি মিহরাবের স্থলে ১ টি ছোট দরজা আছে। অনেকের মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন আর এই দরজা ছিল তার প্রবেশ পথ। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনির মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ।
এছাড়াও মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।
পরিদর্শন
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকায় টিকেট করতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে প্রবেশ টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা। রবিবারে পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় বেলা ২.০০ থেকে। গরমকালে খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫ টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে থেকে ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
যাতায়াত
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহণের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ ও ইগল পরিবহণের গাড়ি ছাড়ে। বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে করে ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি তে করে করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন। খুলনা থেকে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মত।
রাত্রিযাপন
বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই, তবে মাঝারি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেও থাকার জন্য খোঁজ নিয়ে দেখা ভালো। আর বাগেরহাট থেকে খুলনা কাছে, তাই খুলনা গিয়েও কোন আবাসিক হোটেলে থাকা যাবে।
খাওয়াদাওয়া
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
1. বাগেরহাট জাদুঘর
2. খান জাহান আলীর মাজার
3. মংলা বন্দর
4. নয় গম্বুজ মসজিদ
পরিদর্শন
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকায় টিকেট করতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে প্রবেশ টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা। রবিবারে পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় বেলা ২.০০ থেকে। গরমকালে খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫ টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে থেকে ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
যাতায়াত
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহণের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ ও ইগল পরিবহণের গাড়ি ছাড়ে। বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে করে ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি তে করে করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন। খুলনা থেকে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মত।
রাত্রিযাপন
বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই, তবে মাঝারি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেও থাকার জন্য খোঁজ নিয়ে দেখা ভালো। আর বাগেরহাট থেকে খুলনা কাছে, তাই খুলনা গিয়েও কোন আবাসিক হোটেলে থাকা যাবে।
খাওয়াদাওয়া
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
1. বাগেরহাট জাদুঘর
2. খান জাহান আলীর মাজার
3. মংলা বন্দর
4. নয় গম্বুজ মসজিদ
Comments
Post a Comment